রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো ও তাদের ফজিলত
রমজান মাস ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বরকতময় ও পবিত্র মাস, যেখানে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এই মাসে রোজা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত, ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দোয়া হচ্ছে মুমিনের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব।
এই ব্লগে আমরা রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া নিয়ে আলোচনা করব, যেমন—সেহরি ও ইফতারের দোয়া, রোজার নিয়ত, তারাবিহ নামাজের পর দোয়া, শবে কদরের দোয়া, লাইলাতুল কদরের বিশেষ আমল ও অন্যান্য মাসনূন দোয়াগুলো। পাশাপাশি, প্রতিটি দোয়ার বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত সম্পর্কেও বিস্তারিত জানানো হবে, যাতে যে কেউ সহজেই এগুলো মুখস্থ করতে পারেন এবং আমল করতে পারেন। রমজানের এই বরকতময় সময়কে আরও অর্থবহ করে তুলতে চলুন শিখে নেই গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো ও তাদের তাৎপর্য।
রোজার নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়া
بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)
সেহরির দোয়া:
আরবি:
اللهم إني نويت بصوم غدٍ لك فاغفر لي ما تقدم من ذنبي وما تأخر
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি নাওয়াইতু বিসওমি গাদিন লাকা ফাগফিরলি মা তাকাদ্দামা মিন জাম্বি ওয়া মা তা’আখখার।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আগামীকালের রোজার নিয়ত করলাম আপনার সন্তুষ্টির জন্য, অতএব আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ ক্ষমা করুন।
শবে কদরের দোয়া
আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)- কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব?
তিনি বলেন, ‘তুমি বলো, ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ উচ্চারণ : ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’ (আরবি উচ্চারণ দেখে পড়বেন)।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে তিরমিজি : ৩৫১৩)।সুতরাং সারাদিন-রাত বেশি বেশি এই দোয়া করবেন। এই দোয়াটি হাঁটা-চলা- শোয়া অবস্থায় করা যায়। শেষ দশকে বেশি বেশি পড়া উচিত।
এক. نَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
উচ্চারণ : ইন্নাআনজালনা-হু ফি লাইলাতিল কাদর।
অর্থঃ আমি একে নাজিল করেছি শবে কদরে।
দুই. وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
উচ্চারণ : ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর।
অর্থ : শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?
তিন. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
উচ্চারণ : লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।
অর্থ : শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
চার. تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
উচ্চারণ : তানাঝজালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফিহা-বিইজনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।
অর্থ : এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতারা ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।
পাঁচ. سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
উচ্চারণ : ছালামুন হিয়া হাত্তা-মাতলা’ইল ফাজর।
অর্থ : এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।এ রাতের ফজিলত অন্য যে কোনো রাতের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। লাইলাতুল কদরের রাত হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে যত বেশি নফল নামাজ আদায় করবেন তত বেশি সওয়াব।
নতুন চাঁদ দেখার দো‘আ :
আরবি:اَللهُ أَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ وَالتَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَتَرْضَى، رَبِّىْ وَرَبُّكَ اللهُ
উচ্চারণ : আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ ‘আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমা-নি, ওয়াস্সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-মি, ওয়াত্তাওফীক্বি লিমা তুহিববু ওয়া তারযা; রব্বী ওয়া রব্বুকাল্লা-হ ।
অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উপরে চাঁদকে উদিত করুন শান্তি ও ঈমানের সাথে, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে এবং আমাদেরকে ঐ সকল কাজের ক্ষমতা দানের সাথে, যা আপনি ভালবাসেন ও যাতে আপনি খুশী হন। (হে চন্দ্র!) আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ’।
রমজান মাস ইবাদতের বিশেষ সুযোগ এনে দেয়, তাই আমাদের উচিত এই সময়টাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। তারাবিহ, শবে কদর, দোয়া ও অন্যান্য আমলগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের দোয়া কবুল করুন। আমিন।
দৈনন্দিন জীবনে ১৫ টি জরুরি দোয়া পড়ার মাধ্যমে আপনি আপনার আমলনামা কে আরও ভারি করতে পারেন